ব্যক্তিজীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব ও গুরুত্ব
প্রদীপ ভট্টাচার্য্যঃ শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যই মানুষকে সুস্থ রাখে না, শরীরকে সুস্থ রাখতে মানসিক সুস্থতারও প্রয়োজন। আপনার শরীরে সেরকম কোনও রোগ না থাকলেও আপনার মনে যদি কোনও শান্তি না থাকে তাহলে কিন্তু আপনার শরীরও ঠিক থাকবে না। একথা ঠিকই যে, আমরা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে যতোটা ভাবি, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ততোটা ভাবি না।
স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থার সুস্থ সমন্বয়। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে গেলে ব্যক্তিকে অবশ্যই মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে।
মন এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের চিন্তা, ভাবনা, আবেগ, অনুভূতি সবই মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত।
ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে তার পারিবারিক, অর্থনৈতিক, ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি, আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের সাহচর্য, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম ও ঘুম ইত্যাদির ওপর। এই বিষয়গুলিই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
ব্যক্তিজীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম।
মানসিক সুস্থতা আপনার কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিগণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় অনেকটাই ভালো। এই কারণে সিজোফ্রেনিয়া, ক্ষনস্থায়ী মানসিক ব্যাধি, বিভ্রম ব্যাধি, সাইকোটিক ডিজঅর্ডার, ডায়াবেটিস সহ হৃদরোগের জটিল ও কঠিন রোগ ঠেকাতে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।
মনে রাখতে হবে যে, বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, অতি আবেগের বশবর্তী হওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি নিয়ে আমরা কখনোই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারিনা।
তাই আপনি যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই এই উপায়গুলি মেনে চলুন।
সর্বপ্রথমে আপনার মনকে প্রসারিত রাখুন। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, অনাহার থেকে দূরে থাকুন। সবার সাথে খোলা মনে মিশুন।
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।
সবসময় পছন্দমতো কোনো না কোনো ভালো কাজে নিজেকে যুক্ত রাখুন।
শরীর ও মন সুস্থ রাখতে যদি সম্ভব হয়, তাহলে খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম করুন।
আপনি খাবার খান সময় ও নিয়ম মেনে।
একঘেয়েমি কাটাতে চিত্তবিনোদন উপভোগ করুন।
সময় ও সুযোগ পেলে পাহাড়, ঝর্না কিংবা সমুদ্রে চলে যান।
বড় কোনও সমস্যার সম্মুখীন হলে, তা মনের মধ্যে চেপে না রেখে সঠিক আত্মীয়-স্বজন ও সঠিক বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তা শেয়ার করে তাদের পরামর্শ নিন।
এছাড়া আপনার যদি কোনও শখ থাকে যেমন, বাগান করা, বই পড়া, সেলাই করা, রান্না করা, ছবি আঁকা, তাহলে সেগুলো অবশ্যই বজায় রাখুন।
ওর এটা আছে তাই আমারও এটা থাকতে হবে, এমন চিন্তা কখনও মনে আনবেন না। সবসময় নিচের দিকে তাকান। দেখবেন আপনার থেকেও অনেক বেশী দু:খ ও কষ্ট নিয়ে মানুষ বেঁচে আছেন। তাছাড়া জানবেন, আপনি চাইলে মাটি ছুঁতে পারবেন কিন্তু চাইলেও কোনদিন আকাশ ছুঁতে পারবেন না।
কোনও ধরনের মানসিক রোগ দেখা দিলেই, লজ্জা না করে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
নিজের চোখে না দেখে বা নিজের কানে না শুনে, কখনোই অপরের কথা শুনে কোনোরকম মন্তব্য করবেন না।
আপনি কখনোই আপনার সব কিছু সকলের কাছে জানাবেন না। ব্যক্তিগতটা এমন কাউকেই জানান, যার কাছে এটা ব্যাক্তিগতই থাকবে। নাহলে আপনি ব্ল্যাকমেলিং এর শিকার হতে পারেন।
সব শেষে, কখনোই কারো কাছ থেকে কোনোরকম আশা করবেন না, সে আপনার যতই নিকটজন হোক না কেন। মনে রাখবেন, আশা না করে কিছু পেলে যেমন বেশি আনন্দ পাবেন তেমনি আশা করে কিছু না পেলে দু:খ পাবেন তার অনেক গুণ বেশি।
আশাকরি এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি মানসিক তথা শারীরিক দিক থেকে সুস্থ থাকবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
No comments: