৪০-এর পর ওজন কমানো কি কঠিন হয়ে যায়
আপনার বয়স কি ৪০ ছুঁই ছুঁই করছে? তা হলে তো জীবনের সেরা সময়টা এসে পৌঁছেছেন আপনি! কেরিয়ারের দিক থেকে মোটামুটি নিশ্চিন্ত, সংসারটাও সামলে আনা গিয়েছে৷ আগামী ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয়ও হয়েছে... এবার নিজের যত্ন নেওয়ার পালা৷ হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে কিছু হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য ওজন কমানোটা কঠিন হয়ে যায় এ সময়ে, কিন্তু ইচ্ছে আর মনের জোর থাকলে সেই অসাধ্যটাও আপনি সাধন করে ফেলতে পারবেন৷ জেনে নিন কী কী করলে কাজটা সহজ হবে৷
প্রথমেই কথা বলুন আপনার ডাক্তারের সঙ্গে:
রাতারাতি ওজন কমানোর চেষ্টা করলে শরীরে তার কোনও বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে না তো? সবার আগে সেটা জেনে নিন আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে৷ ওজন কমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠার কথা, তার বদলে যদি অন্য কোনও সমস্যা দেখা দেয়, বা এনার্জি লেভেলে ঘাটতি আসে, তা হলে বুঝতে হবে কোথাও কোনও গন্ডগোল হচ্ছে৷ ওজন কমানোর পর রোজের ওষুধের তালিকাটা ছোট হয়ে আসার কথা৷ যাঁদের হাঁটু বা কোমরে ব্যথা আছে, তাঁরা রোগা হলেই ফারাকটা বুঝতে পারবেন৷ কথায় কথায় আগের মতো হাঁফ ধরবে না, বাড়বে ধৈর্য ও কাজ করার ইচ্ছে৷
খুব ভালো হয় একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারলে:
ইন্টারনেট, পত্রপত্রিকার সূত্রে ওজন কমানোর হাজারটা পদ্ধতির হদিশ আমাদের সবার কাছেই আছে৷ কিন্তু ঠিক তার কোনটা আপনার শরীরে কাজে দেবে সেটা বোঝা কঠিন৷ তাই সবচেয়ে ভালো হয় একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারলে৷ আপনার রোজের কাজকর্মে কতটা ক্যালোরি খরচ হয়, দৈনন্দিন রুটিন ঠিক কেমন, সে সব হিসেব করে তিনি একটা খাদ্যতালিকা ঠিক করে দেবেন৷ এই সময় থেকে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়, হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে, সে সব মাথায় রেখে রোজের প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণটা ঠিক করতে হবে৷
ধৈর্য হারাবেন না:
২০ বা ৩০-এর কোঠায় নিয়মিত হাঁটলে বা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় করলেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে৷ ৪০-এর পর কিন্তু সেটুকুতে হবে না৷ তিন ধরনের ব্যায়াম আপনার রোজের শরীরচর্চার রুটিনে রাখতেই হবে, তবেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে ওজন, মাসলের টোনিং হবে এবং আপনি ভিতর থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ তাই কার্ডিওর পাশাপাশি ওয়েট ট্রেনিং আর স্ট্রেচিংও করতে হবে নিয়ম করে৷ সবচেয়ে বড়ো কথা, হাতে-নাতে ফল পাচ্ছেন না বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না৷ এই বয়সে এসে চট করে রেজ়াল্ট দেখতে পাবেন না, ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে৷
প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আস্থা রাখুন:
আপনার কি রাতে ভালো ঘুম হয় না? ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুঠো-মুঠো ওষুধ খান? এই অভ্যেসগুলো বদলাতে হবে৷ তার কারণ এবার আপনার শরীর মেনোপজ়ের দিকে এগোচ্ছে, তাই বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন৷ তা ছাড়া, অনিয়ম করলে ওজন কমানোও ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়বে৷ দিনে অন্তত 8 ঘণ্টা ঘুম দরকার, যে কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের অনুমতি নিন৷
ডায়েটের দিকে নজর দিন:
দিনের বেলা অপরিমিত চা-কফি বা চিনিমিশ্রিত শরবত/ প্যাকেটজাত পানীয়/ নরম পানীয় খাওয়া বন্ধ করতে হবে৷ তাজা শাকসবজি-ফলমূল খাওয়ার উপর জোর দিন৷ ময়দা, সাদা ভাতের বদলে লাল চালের ভাত, ভুষিসমেত আটা, রোলড ওটসের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট রাখুন খাদ্যতালিকায়৷ রান্নায় তেল-মশলার পরিমাণ কমান, ভাজাভুজি বা মিষ্টিও চলবে না৷ তবে ডায়েটিশিয়ান অনুমতি দিলে শুকনো ফল ও বাদাম খেতে পারেন৷ জনপ্রিয় ডায়েট টেকনিক মানার চেয়ে সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করার দিকে বেশি জোর দিন, কারণ বাকি জীবনটা আপনাকে সেটাই মেনে চলতে হবে৷
No comments: