রাস্তার দাবীতে ধান গাছ পুঁতে বিক্ষোভ-অবরোধ
রাস্তার দাবীতে ধান গাছ পুঁতে বিক্ষোভ-অবরোধ
উত্তর ২৪ পরগনার: রাস্তার দাবীতে ধান গাছ পুঁতে অবরোধ বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। বামনগাছি স্টেশন থেকে সুড়িপুকুর পর্যন্ত দীর্ঘ তিন কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। খানা-খন্দে ভরা, জায়গায় জায়গায় রাস্তা পরিণত হয়েছে পুকুরে। দিন হোক বা রাত, যাতায়াতে অসুবিধা হচ্ছে সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এবার সেই রাস্তা সারাইয়ের দাবীতে রাস্তার উপর মরা ধানের বিচলি ও গাছের ছাল পুঁতে শুক্রবার বিক্ষোভ দেখায় কাশিমপুর অঞ্চলের শঙ্করগাছি এলাকার মানুষেরা এবং রাস্তার ওপর টোটো দাঁড় করিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চলে বিক্ষোভ।
এই নিয়ে এলাকাবাসীদের দাবী, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতলে দু'মাসের মধ্যে রাস্তা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নারায়ণ গোস্বামী। তিনি জিতে এখন জেলা পরিষদের সভাধিপতি। তারপরেও কেন এই রাস্তা হচ্ছে না প্রশ্ন এলাকাবাসীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা সন্তোষ পাল বলেন, আমাদের রাস্তা সাত বছর পর্যন্ত এভাবে পড়ে রয়েছে। সামনেই একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। প্রশাসন কোনও নজর দিচ্ছে না। এইজন্য আজ আমাদের এই বিক্ষোভ।'
স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর ঘোষ বলেন, 'গ্ৰামের যে বাচ্চারা এখানে স্কুলে পড়ে ভয়ে আসছে না। কাদা, জল, ছেলেমেরা পড়ে যাচ্ছে। পাড়ায় ঘুরলে দশটা বাচ্চার হাত-পা ভাঙ্গা পাবেন। দীর্ঘদিন রাস্তাটা এভাবে পড়ে আছে। আমরা অনেক জায়গায় গিয়েছিলাম রাস্তার জন্য, তাতেও কোনও লাভ হয়নি।'
স্থানীয় অলোকা ঘোষ বলেন, 'রাস্তা হবে না কেন? সব জায়গায় রাস্তা আছে শঙ্করগাছিতে রাস্তা হয় না! রাস্তার সমস্যার জন্য পড়ে যাচ্ছি, হাঁটতে পারছি না, টোটো আসছে না। ভোটের আগে নারায়ণ গোস্বামী বলে গেছেন এখানে তিন মাসের মধ্যে রাস্তা হবে, এখন তো ছয় মাস হয়ে গেল। আবার ভোট এসে গেল, রাস্তা হল না। কে ভোট দেবে এখানে!'
শঙ্করগাছি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমর কৃষ্ণ দাম বলেন, স্কুলে আসতে শিশুদের খুব সমস্যা হচ্ছে, আছাড় খেয়ে পড়ে যাচ্ছে আসতে গিয়ে। অভিভাবকরা প্রতিনিয়ত বলছেন কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তার ব্যবস্থা যদি করা হয় গ্রামবাসীরা, আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে এটুকু বলতে পারি।'
স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে মুখ খোলেন। কাশিমপুর পঞ্চায়েত শঙ্করগাছি এলাকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি বলেন, এই রাস্তা হবে বলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় জেলা পরিষদের প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাই আমরা ভোট করিয়েছি, তবে জিতে গেলেও কাজ হচ্ছে না। পাশাপাশি তিনি আমডাঙার বিধায়ক রফিকুর রহমান, খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ, বারাসত বিধানসভার বিধায়ক চিরঞ্জিয় চক্রবর্তীর দিকেও আঙুল তোলেন।
তৃণমূলের বুথ সভাপতি সময় ঘোষ বলেন, "এর আগের পঞ্চায়েত ভোটে নারায়ণ গোস্বামী এসে বলেন, 'ভোট করার পরে আমি দু'মাসের মধ্যে রাস্তা পাকা করব'। সেই দুমাস চলে যাওয়ার পর আজও নারায়ণ গোস্বামী এখানে আসেননি। আমরা মানুষকে বললাম, ভোট করালাম। মানুষ সেই হিসেবে তৃণমূলকে জেতালো।"
তিনি বলেন, 'আমাদের বিধায়ক এই রফিকুর এই রাস্তা ঘুরেও দেখেন না। কোনও দিনও আসেননি। চিরঞ্জিৎও একবার বলে গেলেন এই রাস্তা করতে হবে, রথীন ঘোষও বলে গেলেন এই রাস্তা করতে হবে। কিন্তু কোনও বিধায়ক, মন্ত্রী কেউ দেখেননা।'
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী জানান, রাস্তাটা দেখে এসেছেন আগামী দেড় মাসের মধ্যে হয়ে যাবে। তিনি বলেন, মানুষের অধিকার বিক্ষোভ দেখানো। আমরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ বামনগাছিতে চৌমাথা থেকে যে রাস্তাটা ভীষণ খারাপ ছিল সেটা ঠিক করেছি। এরপর সেখান থেকে বাইলেন যেগুলো, সেগুলো পর্যায়ক্রমে করা হবে। তারমধ্যে টপ প্রায়োরিটি আমি শঙ্করগাছিকে রেখেছি। কারণ এই রাস্তা আমি নিজে পায়ে হেঁটে গেছি। সেখানকার মানুষজনকে আমি কথা দিয়েছি।য়কথা হয়েছে, সুতরাং এই রাস্তাটা হবে।
এই সময় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও শোনা যায় নারায়ণ গোস্বামীর মুখে। তিনি বলেন, 'পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গত ১০-১২ বছরে যে ৩৪ বছরের বাংলার বন্ধ্যাত্ব রাজনীতির বিরুদ্ধে যে আলো দেখানোর চেষ্টা করেছেন, ইনফাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টে, অভূতপূর্ব পরিবর্তন। সেই পরিবর্তন থেকে শঙ্করগাছিও বাদ থাকবে না। আগামী এক দেড় মাসের মধ্যে রাস্তার কাজ শুরু হবে।'
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। কাশিমপুর অঞ্চল বিজেপি যুব সেক্রেটারি তন্ময় দাসবলেন, 'তৃণমূল তো সারা জীবন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে, কোনও কাজ করছে না সাধারণ মানুষের জন্য। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করলে সিবিআই, ইডি ধরাধরি-কড়াকড়ি করে নাকি! সবাই সবারটা গোছাচ্ছে।'
তিনি অভিযোগ করেন, এর আগে বিজেপি জিতলেও পাঁচ বছর পঞ্চায়েত থেকে কোনও কাজ দেওয়া হয়নি। নারায়ণ গোস্বামী এসে এখানকার মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে, 'জিতলে রাস্তা করে দেব', তাই মানুষ ওদের ভোট দিয়েছে। এখানে কোনও কাজ হয় না।
No comments: