ঘরে বসে শিশুরা মোবাইল টিভিতে আসক্ত হচ্ছে, জেনে নিন ক্ষতি ও উত্তরণের উপায়
বাচ্চাদের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:
আজ প্রতিটি পিতামাতার একটিই অভিযোগ রয়েছে যে তাদের সন্তান মোবাইলের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। মোবাইলে নানা ধরনের জিনিস দেখার কারণে তার ভাষার সাথে সাথে খিটখিটে হয়ে উঠেছে। আজ সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। মানুষ চাইলেও এই নেশা থেকে নিজেকে বের করতে পারে না। সমস্যা আরও বাড়ে যখন এই নেশা বড়দের দেখে বাচ্চাদেরও নিতে শুরু করে। এমতাবস্থায়, একজন অভিভাবক হিসাবে, শিশুর বিকাশে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব আপনার জানা উচিত।আপনাদের বলে রাখি, শিশুদের দীর্ঘ সময় মোবাইল এবং টিভিতে সময় কাটানো তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর অসুবিধাগুলি এবং কীভাবে অভিভাবকরা শিশুদের এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
শিশুদের উপর ইন্টারনেটের ৫টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মানসিক পরিবর্তন-
আজকাল শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে চোখ রেখে গেম খেলতে থাকে। কিছু সময়ের জন্য তাদের কাছ থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হলে তাদের রাগ এবং বিরক্তি দেখানো সাধারণ। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি এই আসক্তি তাদের মানসিক পরিবর্তনের লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া এত বড় যে শিশু কোথায়, কখন এবং কীভাবে তথ্য নিচ্ছে তা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এই ধরনের পরিস্থিতি শিশুদের পর্নোগ্রাফিক, বা ক্ষতিকারক ওয়েবসাইটের কাছে প্রকাশ করতে পারে, যা তাদের চিন্তাভাবনা প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিষণ্নতার প্রধান কারণ
যারা বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার্থী ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। অস্থিরতা এবং তাদের দৈনন্দিন কাজগুলি পরিচালনা না করার মতো সমস্যাগুলি এই ধরনের লোকদের মধ্যে দেখা যায়। অল্প বয়সে, শিশুরা ভাল এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় না এবং সোশ্যাল মিডিয়া সহজেই তাদের চিন্তাভাবনা এবং আচরণ পরিবর্তন করতে পারে।
অনিদ্রার শিকার
আজ ইন্টারনেট মানুষের মধ্যে অনিদ্রার রোগ ছড়াচ্ছে। মোবাইল আসক্তির কারণে শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক, তারা রাতে অবসর সময় পেলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করতে বেশি পছন্দ করে। যার কারণে তাদের ঘুম সম্পূর্ণ হয় না এবং এখান থেকেই মানুষ অনিদ্রায় ভুগতে শুরু করে।
সময়ের অপব্যবহার
যেসব শিশু ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে থাকে তারা কখন যে মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে ফেলেছে তারা জানে না। এরপর পড়াশোনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই তাদের।
ইন্টারনেট আসক্তি-
ইন্টারনেট আসক্তি কোনো নেশার চেয়ে কম নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যধিক সময় ব্যয় করার ফলে একজন ব্যক্তি তার মনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তার চারপাশের ঘটনা সম্পর্কে অজ্ঞান হয়ে সে তার নিজের জগতে ব্যস্ত থাকে। যার সরাসরি প্রভাব শুধু তার মানসিক অবস্থাতেই পড়ে না, ব্যক্তিগত জীবনেও তার সম্পর্কগুলো দুর্বল হতে থাকে।
এই টিপসের সাহায্যে দূর করুন শিশুদের মোবাইল-টিভি আসক্তি-
মোবাইল ও টিভি আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর চেষ্টা করা। এতে করে আপনার বাচ্চারা ভালো বোধ করবে এবং তাদের মস্তিষ্কের বিকাশও ভালো হবে।
-অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কাছে বসে ভালো জিনিস, ভালো শিক্ষামূলক সিনেমা, গল্প, ধর্মীয় বিষয় ইত্যাদি দেখাতে পারেন। এতে শিশুর আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে।
-সন্তানের মোবাইল দেখার জন্য একটি সময় ঠিক করুন। যাতে মোবাইলে তার ন্যূনতম সময় নষ্ট হয়।
নিজের সারাক্ষণ মোবাইলে ব্যয় করবেন না। এতে করে শিশুর মনে হবে আপনি তাকে বাধ্য করছেন।
মোবাইলের দিকে না তাকিয়ে বাচ্চাদের গাছ লাগানো,জল দেওয়া, ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজে উৎসাহিত করুন। এটি করার সময় তার কাজের প্রশংসা করুন এবং তাদের সুবিধাগুলি সম্পর্কেও বলুন।
আপনার বাচ্চাদের শোবার ঘরে টিভি, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন রাখবেন না।
ভিডিও গেম, সিনেমা এবং টিভি প্রোগ্রাম সম্পর্কে আপনার সন্তানের সাথে সে কী পছন্দ করে এবং কী অপছন্দ করে তা নিয়ে আলোচনা করুন।
No comments: