স্ট্রোক আর ডিহাইড্রেশন থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়গুলি জেনে নিন
গরম আর অস্বস্তি যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ছে অসুস্থতাও। বিশেষ করে যাঁদের দিনের মধ্যে অনেকটা সময় বাইরে ঘুরে কাজ করতে হয়, বা শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা বেশি। বাচ্চাদের যতই বলুন, তারা তো আর ঘরে বসে থাকবে না, ঠিক রোদে দৌড়োদৌড়ি করে খেলাধুলো করবে। তার ফলেই শরীরের তাপমাত্রা মাত্রাছাড়া বেড়ে যায় অনেক সময়ে, তাকে বলে ‘হিট এগজ়শন’। আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৭-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রবল গরমের মধ্যে দিনের অনেকটা সময় কাটালে যদি তাপমাত্রা কোনওভাবে ৪০ ডিগ্রি পেরিয়ে যায়, তা হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আপনার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিরও। শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে বা ডিহাইড্রেশন হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে বুঝবেন যে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে?
খুব ঘাম হবে, কারণ ঘাম আপনার শরীরের নিজেকে ঠান্ডা রাখার প্রাথমিক অস্ত্র। মাথা ঘুরবে, প্রবল তেষ্টা পাবে। চোখে অন্ধকার দেখে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। ঘামের ফলে প্রচুর নুন বেরিয়ে যায় শরীর থেকে, তাতে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। তেমন হলে বমি পাবে ঘন ঘন, ক্র্যাম্প ধরবে মাসলে। মাথা ধরতে পারে, বাড়তে পারে হৃদস্পন্দনের হারও।
এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় কী?
বেলা এগারোটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত নেহাত প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বেরোবেন না, কারণ ওই সময়েই রোদের ঝাঁজ থাকে সবচেয়ে বেশি। একান্তই বেরোতে হলে অবশ্যই জলের বোতল রাখুন সঙ্গে। খুব ভালো হয় নুন-চিনি মেশানো জল খেতে পারলে। সঙ্গে বরফে মোড়া রুমাল বা তোয়ালে রাখতে পারলেও খুব ভালো হয়। সোজা কথায়, শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মক বাড়তে দেওয়া চলবে না। দূরে থাকুন চা-কফি-মদ-সফট ড্রিঙ্ক থেকে। খেতে পারেন ডাবের জল, ফলের রস, লস্যি, ঘোল ইত্যাদি। হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। বাইরে যেদিন বেরোবেন সেদিন অন্তত পুরোহাতা সুতির জামা পরা আবশ্যক। খুব চড়া রোদ্দুরে ব্যায়াম করতে বেরনোও দারুণ বিপজ্জনক হতে পারে, সে কথা খেয়াল রাখবেন কিন্তু! ব্যায়াম শুরু আধ ঘণ্টা আগে ও শেষ করার ১৫ মিনিট পরে প্রচুর জল খেতে হবে। প্রতিদিন ঠান্ডা জলে একাধিকবার স্নান করাও বাধ্যতামূলক।
মরশুমি ফল ও সবজি যেন খাদ্যতালিকায় অবশ্যই থাকে
আম, পাকা কলা, লিচু, তালশাঁস, ফলসা, আঙুরের মতো ফল থেকে প্রচুর জল ও এনার্জি মিলবে। শরীরে জলের জোগান বাড়াবে পটল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙে, চিচিঙ্গে, লাউ, করলা, কুমড়ো, ডাঁটা, পেঁপের মতো সবজি। এছাড়া রোজের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখুন ডাল, পাতলা ঝোল, আম বা তেঁতুলের পাতলা টক ইত্যাদি। শরীরের তাপমাত্রা কমাতে কাঁচা পেঁয়াজ দারুণ কার্যকর, তাই আপনার স্যালাড বা বিকেলের মুড়িমাখায় অবশ্যই পেঁয়াজকুচি যোগ করুন। কিন্তু পেঁয়াজ কেটে অনেকক্ষণ ফেলে রাখবেন না, তখনই খেয়ে নিন। পুদিনা, জিরেগুঁড়ো, বিটনুন, ভাজা মশলা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন সুস্বাদু শরবত। তুলসীর বীজ, মৌরিও শরীর ঠান্ডা রাখতে সমর্থ। রোজ রাতে মৌরি ভিজিয়ে রাখুন জলে, সকালে ছেঁকে পান করে নিন। দুধ, জ্যুস বা স্মুদিতে মিশিয়ে নিন তুলসীর বীজ। মিনিট ১৫ ভিজলেই তা ফুলে উঠবে। এই বীজ শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করবে। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না, তাতেও শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
No comments: