জ্বর হয়েছে মেনে চলুন কয়েকটি নির্দিষ্ট নিয়ম
প্রতি বছর এই সময়টায় নাজেহাল হতে হয় জ্বরের জ্বালায়। শরৎকালে যেহেতু ঝট করেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, তাই জীবাণুর বাড়বৃদ্ধিও হয় খুব দ্রুত। তা ছাড়া মশাবাহিত রোগ তো আছেই! জল জমে থাকে যেখানে সেখানে, তাতে মশার বংশ তরতরিয়ে বাড়ে। আজকাল নানা ধরনের রেপেলেন্ট বেরিয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু আবার পোশাকে লাগিয়ে রাখলেও চলে। সেগুলি ব্যবহারের ব্যাপারে কোনও কার্পণ্য করবেন না। অনেক পরিবারেই বয়স্ক মানুষরা বাচ্চাদের নিয়ে বিকেলবেলা পার্কে যান৷ সেক্ষেত্রে তাঁরা যেন পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরে থাকেন, সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন৷ হাতের কাছে রাখুন সিট্রোনেলা তেল। সুগন্ধি এই তেলও ঠেকিয়ে রাখবে মশা বা কোনও পোকামাকড়কে। ‘‘ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার মতো কিছু কিছু ভাইরাল জ্বর মশা কামড়ানোর কারণেই হয়। তাই আপাতভাবে জ্বর হলেই সেটা ঠিক কোন কারণে হয়েছে, সেটা ধরা মুশকিল। কিছু পরীক্ষা করিয়ে তবেই নিশ্চিত হওয়া যাবে,’’ বলছেন ফর্টিস আনন্দপুর হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দীপ ঘোষ।
এ বছর কিন্তু ভাইরাল ফিভারও খুব হচ্ছে৷ সেই সঙ্গে প্রতি বারের মতো ডেঙ্গি তো আছেই! কীভাবে বুঝবেন, আপনার জ্বরটিকে কোন গোত্রে ফেলা যায়? সিকে বিড়লা হসপিটালস সিএমআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. সুমন মিত্র বুঝিয়ে বলছেন, ‘‘ভাইরাল ফিভারের ক্ষেত্রে তীব্র জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে গা-হাত-মাথায়-পায়ে খুব ব্যথা থাকে। শরীর ভেঙে পড়ে একেবারে। সেই সঙ্গে কারও কারও ত্বকে লালচে ভাব থাকে যেটাকে ‘ফ্লাশিং’ বলা হয়। এই লাল ভাবটা চোখে দেখা যায়, কিন্তু চুলকোয় না সেই অর্থে। জ্বর আসার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কিছু বেসিক পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিই আমরা। ‘বেসিক পরীক্ষা’ বলতে কিন্তু ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি সব ধরনের পরীক্ষা করাতে হবে না তখনই। রুটিন ব্লাড কাউন্ট করালেও বোঝা যায় সেটা ভাইরাল ফিভার না ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আছে।’’
জ্বরজারি হলে ফেলে রাখবেন না। একেবারে প্রথম থেকেই শরীরে যেন তরলের জোগান ঠিক থাকে, সেটা দেখতে হবে৷ জল তো বটেই, ডাবের জল, ফলের রস পান করুন প্রচুর পরিমাণে৷ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খাবেন না৷ পুষ্টিকর, সহজপাচ্য খাবারও খেতে হবে৷ ভাইরাল ফিভার দিন তিনেকের মধ্যে কমতে থাকে, শরীরও ক্রমশ ভালোর দিকে যায়৷ ডেঙ্গি হলে কিন্তু এত সহজে নিষ্কৃতি মিলবে না৷ ডা. মিত্র বলছেন, ‘‘একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে যদি আপনি রক্ত পরীক্ষা করান, তা হলে ডেঙ্গি ধরা না পড়ারই কথা। জ্বর আসার চারদিন পরে ডেঙ্গির আইজিএম পরীক্ষা করালেও সেটা নেগেটিভ আসার চান্সই বেশি। ডেঙ্গি হলে মোটামুটি ৮-১০দিনের একটা চক্র চলে। নিয়ম হচ্ছে, জ্বর আসার পাঁচদিন পর এই পরীক্ষাটা করানো। এনএসওয়ান পরীক্ষাটা জ্বর আসার 24 ঘণ্টা পর থেকেই পজ়িটিভ আসতে পারে, তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি জ্বর আসার দুই থেকে তিনদিন পর পরীক্ষাটা করান।’’
যাঁরা ডায়াবেটিস, হার্ট বা কিডনির অসুখে ভুগছেন, বা আগেও কখনও ডেঙ্গি হয়েছে, তাঁদের খুব সাবধানে রাখতে হবে৷ দাঁতের মাড়ি, মল বা মূত্রের মধ্যে দিয়ে রক্তপাত হলে খুব সাবধান, রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট কমে গেলেই তেমনটা হয় সাধারণত৷ যদি মনে হয় পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে যাচ্ছে, তা হলে দেরি না করে হাসপাতালের দ্বারস্থ হোন।
No comments: