মা হতে চলেছেন , তাহলে মন ভালো রাখুন এভাবে
মাতৃত্বের সঙ্গে অনেক ভালো ভালো বিষয়কে জুড়ে দেওয়া হয় বরাবরই, কিন্তু হবু মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে বা যিনি সদ্য মা হয়েছেন তাঁর প্রয়োজন-অপ্রয়োজন নিয়ে সেই অর্থে আজও কোনও সচেতনতা তৈরি হয়নি আমাদের দেশে৷ আর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তো আলোচনাই হয় না কোনও স্তরে! তাই আমরা এ তথ্য জানি না যে আমাদের দেশে অন্তত ৭০ শতাংশ গর্ভবতী মেয়েই গর্ভাবস্থার কোনও না কোনও সময়ে ডিপ্রেশনে ভোগেন৷ ফর্টিস হাসপাতাল আনন্দপুরের সঙ্গে যুক্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্জয় গর্গ বলছেন, ‘‘গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার থেকে আরম্ভ করে সন্তান জন্মের পরের ৯-১০ দিন পর্যন্ত এই ডিপ্রেসিভ অবস্থা চলতে পারে৷ সবচেয়ে বেশি তীব্রতা দেখা যায় গর্ভাবস্থার ৩৪-৩৮ সপ্তাহের মধ্যে৷ বেশিরভাগেরই অবশ্য ডাক্তার বা ওষুধপত্রের সাহায্য লাগে না, কিন্তু ১০-১৬ শতাংশ মহিলার ক্ষেত্রে তীব্র মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে৷ সন্তানের জন্মের পর ৩০-৫৪শতাংশ মহিলা মানসিকভাবে খানিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে যান৷ মাইল্ড ডিপ্রেশন থাকে, তার পাশাপাশি থাকে ক্লান্তি, অ্যাংজ়াইটি, বিরক্তি৷ কথায় কথায় কান্না পায়, এই পরিস্থিতিকে বলে পোস্ট পার্টাম ব্লুজ়৷’’ সাধারণত সন্তান জন্মের দু’ সপ্তাহের মধ্যে সমস্যাগুলি নিজে থেকেই চলে যায়৷ কিন্তু এই ধরনের মন খারাপের মধ্যে দিয়ে একবার গেলে একটু সতর্ক থাকাই ভালো, পরবর্তীকালে ফের ডিপ্রেশন ফিরে আসতে পারে৷
সন্তান জন্মের মাসখানেকের মধ্যে ১৬-২০ শতাংশ মহিলা তীব্র ডিপ্রেশনের শিকার হতে পারেন, একে বলে পোস্ট নেটাল ডিপ্রেশন৷ সামাজিক ও প্রাকৃতিক নানা কারণে এই সমস্যা আরও বাড়ে৷ সন্তানের জন্মের পর মায়ের থেকে তাকে আলাদা করে দেওয়ার ফলে এমনটা হতে পারে৷ আজকাল নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে যাঁরা থাকেন, তাঁরা পরিবারের বড়োদের পরামর্শও পান না এই কঠিন সময়ে, সেটাও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷ অনেক মা সংবাদমাধ্যমে সেলেব্রিটিদের চটপট গ্ল্যামারাইজ়ড চেহারায় ফিরে আসতে দেখে আরও মুষড়ে পড়েন, নিজের চেহারা নিয়ে কিছুতেই খুশি হতে পারেন না৷ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিকাশ ব্যানার্জি বলছেন, ‘‘সন্তান জন্মের পর আচমকাই প্রোজেস্টেরন স্তরে ঘাটতি আসে, সেটা এই ধরনের মানসিক সমস্যার অন্যতম কারণ৷’’ ডা. গর্গ ব্যাখা করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘জন্মের পর বাচ্চা প্রায়ই কান্নাকাটি করে, মা তার কারণ বুঝতে পারেন না৷ তখনই তিনি আত্মবিশ্বাস হারাতে আরম্ভ করেন৷ ভাবেন যে মা হিসেবে কর্তব্য পালনে তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন৷ বাচ্চাকে কোলে নিতে অনেকে ভয় পান, ভাবেন শিশুটি হাত পিছলে পড়ে গিয়ে চোট পাবে হয়তো৷ স্নান করাতে গেলে মনে হয় শিশু ডুবে যাবে না তো জলে? আবার একইসঙ্গে বিশ্বাস করে অন্য কারও হাতে সন্তানকে ছাড়তেও পারেন না এঁরা৷ তার উপর মায়ের খাওয়া বা ঘুমেরও ঠিক থাকে না৷ সব মিলিয়ে লাগাতার মন খারাপের একটা বাতাবরণ তৈরি হয়ে যায়৷’’
এই পরিস্থিতি থেকে বেরনোর কোনও রাস্তা আছে কী?
অবশ্যই আছে৷ যদি আপনার মনে হয় সন্তান জন্মের পর আপনি বা আপনার কোনও বান্ধবী/ আত্মীয়া মন খারাপের সমস্যায় ভুগছেন, তা হলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণ নিন৷ যত দেরি হবে, সমস্যা তত ঘোরালো হয়ে উঠবে৷ আর মা যদি চনমনে, হাস্যোজ্জ্বল না হন, তা হলে সন্তান ভালো থাকবে কীভাবে? সমস্যাটা কিন্তু খুব জটিল নয়, একটু সচেতন হলেই আপনার সুখ-শান্তি আবার ফিরে আসবে৷
No comments: